Bangla Fishing

Banglafishing.com

AD

Friday, December 7, 2018

অনলাইন ওয়ার্ল্ড কাঁপানোর গল্প ব্ল্যাক আর্মি পর্ব তিন

www.banglafishing.com


বাংলাদেশ বনাম মায়ানমার যুদ্ধ নিয়ে তৈরি করা  এই যুদ্ধ কাহিনী
........................ব্ল্যাক আর্মি........................
লেখা - Farhan Ahmed Farabi
(পর্ব তিন)😍
২১ তারিখ, ২০১৭।
উত্তাল সমুদ্রের ঢেউকে হার মানিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনএস-ওসমান। নাবিকেরা কন্ট্রোল রুমে ব্যস্ত। জাহাজের উপরের রুম থেকে সিড়ি ভেঙ্গে নিচে নামছে নাবিক তাহসির। মাঈনুলকে দেখে নামতে নামতে বলল,
- কিরে মাঈনুল? কি অবস্থা? দিনকাল কেমন চলছে?
- দেখছিসই তো কেমন চলছে! কাল লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফ স্যার মারা গেছে!
- What?
- সেনাবাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফ, তাকে মেরে রেলওয়েতে ফেলে রাখা হয়েছিল।
- Oh my god!
- অবাক কেন হচ্ছিস? অবাক হওয়ার সময় এটা? সারাদেহে আমার আগুন জ্বলছে। ইচ্ছে করে, বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে তাদের চোখ উপড়ে ফেলি!
এই বলে তাহসিরের সামনে থেকে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় মাঈনুল। তাহসির অসহায়ের মতো জাহাজের রেলিংয়ের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে থাকে।
সাভার ক্যান্টনমেন্ট, মিলিটারি হসপিটেল।
- লেঃ কণা, কি অবস্থা ইমনের? ক্যাপ্টেন সজীব বলল।
- এইতো স্যার, আগের থেকে বেশ ভালো। লেঃ কণা বলল।
--কিরে ফারাবী, সাজিয়া তোমরা এখানে? ভেতরে ঢুকে বলল সজীব।
- হ্যাঁ, ইমনকে দেখতে আসলাম। ফারাবী বলল।
- আগে থেকে তো ভালো আছি, এবার তো যুদ্ধে যেতে পারবো? ক্যাপ্টেন ইমন বলল।
- আরে কি বলে, এই ছেলে পাগল নাকি! পায়ে এখনো ব্যানডেজ লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে। সাজিয়া বলল।
- পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার আগে আপনাকে কোথাও যেতে দেওয়া যাবেনা স্যার! লেঃ কণা বলল।
কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে ফারাবী, সাথে উঠে আসে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফের নির্দেশে দুটো জিপগাড়ী নিয়ে রওনা হয় বগুড়ার উদ্দেশে। একটাতে ফারাবী আর সাজিয়া, অন্যটিতে ২০জন সৈন্য নিয়ে পেছন পেছন এগুচ্ছে ক্যাপ্টেন শাহেদ। ড্রাইভিং সিটে ফারাবী, তার পাশের সিটে বসে আছে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। হাইওয়ের প্রায় শেষ মাথায় এসে হঠাৎ জোরে ব্রেক কষে ফারাবী!
- আরে কি হয়েছে ফারাবী? হঠাৎ এভাবে... ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- সামনে দেখুন, রাস্তা ব্লক!
সামনে চেয়ে দেখে ক্যাপ্টেন সাজিয়া, সত্যিই রাস্তা ব্লক! ফারাবীর দিকে চেয়ে সাজিয়া বলল,
- এখন কি করার?
- ফারাবী গাড়ি থামালেন কেন?
পেছনের গাড়ি থেকে চিৎকার করে বলল ক্যাপ্টেন শাহেদ।
- এখানে রাস্তা ব্লক, যাওয়া সম্ভব না। ফারাবী বলল।
- পাশে একটা ছোট রাস্তা আছে, এটা শর্টকাট, বগুড়া যাওয়া যাবে। শাহেদ বলল।
শাহেদের কথা শুনে কিছুটা সন্দেহ উঁকি দিল সাজিয়ার মনে। ফারাবীকে আস্তে আস্তে বলল,
- এই শাহেদের চাল-চলন আমার খুব একটা ভালো মনে হচ্ছেনা ফারাবী। ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- হুম আমারও এমনই মনে হচ্ছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছে! ফারাবী বলল।
- ফারাবী এদিকে বগুড়া যাওয়া যায়! শাহেদ বলল।
- Shahed are you sure?
- হ্যাঁ, এদিকে অনেকবার গিয়েছি। আর আমার বাড়িতো বগুড়াতেই!
ক্যাপ্টেন সাজিয়া ফারাবীর দিকে চেয়ে বলল,
- তার কথা বিশ্বাস হচ্ছে, আবার হচ্ছেও না! এখন কি করবেন?
ফারাবী কিছুক্ষণ ভেবে সাজিয়ার দিকে চেয়ে বলল,
- এত করে যখন বলছে, তো গিয়েই দেখা যাক? আর গাড়িতে তো জিপিএস লাগানো আছে, কোনো প্রবলেম হলে হ্যাড কোয়ার্টার থেকে দেখবে।
কিছু বলল না সাজিয়া। বামের ছোট রাস্তাটির দিকে গাড়ি ঘুরালো ফারাবী। প্রায় একঘন্টা গাড়ি চালানোর পর সাজিয়া বলল,
- প্রায় একঘন্টা হয়ে গেল, এই রাস্তা তো শেষই হচ্ছেনা ফারাবী।
- একটু অপেক্ষা করে দেখি শাহেদ কি বলতে চাচ্ছিল!
কিছুক্ষণ পরই কন্ট্রোল রুম থেকে লেফটেন্যান্ট নুসরাত ফারাবীকে ওয়্যারলেসে বলে যে তারা ভুল পথে যাচ্ছে। তবুও শাহেদের কথার জন্য কিছু করতে পারেনি ফারাবী। গাড়ি চালাতে চালাতে আবারও ব্রেক কষে কিছুক্ষণ পরই কন্ট্রোল রুম থেকে লেফটেন্যান্ট নুসরাত ফারাবীকে ওয়্যারলেসে বলে যে তারা ভুল পথে যাচ্ছে। তবুও শাহেদের কথার জন্য কিছু করতে পারেনি ফারাবী। গাড়ি চালাতে চালাতে আবারও ব্রেক কষে ফারাবী।
- আবার কি হলো?
- সামনে, কেউ পাথর দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে রেখেছে! এখানে কে পাথর রাখতে পারে!
- আমার মনে হয় আমরা রাস্তাও ভুল করেছি, রাস্তা তো এমন হওয়ার কথা না!
- চিন্তা করবেননা, আগে পাথরগুলো সরিয়ে সামনে গিয়ে দেখি।
এই বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে ফারাবী, অন্যপাশ দিয়ে নেমে আসে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। ফারাবী হয়তো বুঝতে পারেনি, দূর থেকে তাকে স্নাইপারের লেন্সের মাধ্যমে কেউ দেখছে! একটা একটা করে পাথর রাস্তার ধারে ছুড়ে ফেলে ফারাবী আর সাজিয়া। গাড়িতে উঠার জন্য পেছন ফিরতেই নির্বাক হয়ে যায় দুজন! শাহেদের গাড়ি নেই! কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই। শাহেদকে ডেকে ডেকে ছুটে যায় দুজন! হঠাৎ সাজিয়ার ডাক শুনে তার কাছে ছুটে যায় ফারাবী,
- এটাতো শাহেদের গাড়ির ড্রাইভারের লাশ!
- He is already death!
লাশ দেখেই তাদের পিঠে ঝুলন্ত রাইফেলটি হাতে নেয় ফারাবী আর সাজিয়া। ফারাবী কিছু একটা কুড়িয়ে নিয়ে বলল,
- এটাতো শাহেদের জিপিএস সিস্টেম, তাইনা? জিপিএসটা নষ্ট করেছে কেউ!
- কিন্তু সে কোথায়? আর গাড়িই বা কোথায়!
ফারাবী কিছু বলতে যাবে এমন সময় সমস্ত পরিবেশ কাঁপিয়ে বিকট শব্দে গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়! মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় সমস্ত গাড়ি! বোমার আঘাতে দূরে ছিটকে পড়ে ফারাবী আর সাজিয়া। সাজিয়াকে হাতের ইশারায় দ্রুত লুকিয়ে পড়তে বলে ফারাবী। কিছুক্ষণ পরই জলপাই রঙের পোশাক পড়া ৭-৮জনকে আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করতে দেখে তারা, বুঝতে বাকি রইলোনা ফারাবীর, এরাই সেই বার্মিজ জানোয়ার! বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে তাদের উটকো ভাষায় কি যেন বলাবলি করতে করতে চলে যায় তারা। ভাগ্যক্রমে তাদের দেখতে পায়নি বার্মিজরা! গাড়ি থেকে দূরে ছিল বলে তেমন কিছুই হয়নি তাদের। ফারাবীর ওয়্যারলেসটা তার থেকে কিছুটা দূরে পড়ে আছে। কোনোরকমে স্ক্রুলিং করে ওয়্যারলেসটা নিয়ে হ্যাড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ফারাবী। তবে তার ওয়্যারলেস নষ্ট হয়ে গেছে! বম্ব ব্লাস্টের আঘাতেই হয়তো এমনটা ঘটেছে! কোনোরকমে উঠে দাড়িয়ে সাজিয়ার দিকে ছুটে যায় ফারাবী। সাজিয়াকে তুলতে তুলতে বলল,
- সাজিয়া, আপনার ওয়্যারলেস কোথায়?
- গাড়িতে ছিল, কথা বলার পর সেটা আমার হাতেই ছিল। পাথর সরানোর জন্য যখন নেমেছিলাম, তখন গাড়িতে ফেলে এসেছিলাম।
- Oh my god! এখন কিভাবে খবর পাঠাবো! জিপিএস সিস্টেম ও নষ্ট হয়ে গেছে!
- আমরা যেদিক থেকে এসেছিলাম, সেদিকেই ফিরে যাই? হাইওয়ে তো পেয়ে যাবো।
- কিন্তু..........
রাস্তা হারিয়েছে তারা, সবদিক প্রায় একইরকম। কোনদিকে এসেছিল, মোটেও বুঝা যাচ্ছেনা। সাজিয়া চারপাশে চেয়ে বলল,
- এখন কি করবেন? রাস্তা তো পাচ্ছিনা!
ফারাবী কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভেবে বলল,
- সামনের দিকে হাটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, So let's go!
এই বলে সামনের দিকে পা বাড়ায় ফারাবী আর সাজিয়া।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর সাজিয়া বলল,
- জায়গাটা আমার তেমন সুবিধার মনে হচ্ছেনা, যেখানে কিনা শাহেদের গাড়ি সহ গায়ব হয়ে গেল?
- এখানে অলৌকিক কিছুই নয়, স্পষ্ট বুঝা যায় এটা মানুষের কাজ!
- সেটা কিভাবে?
- দেখুন, যদি মানুষের কাজ না হতো তাহলে ড্রাইভারের লাশ আর জিপিএস বাইরে এলো কিভাবে?
হাটতে হাটতে প্রায় রাত হয়ে গেছে, অন্ধকার হয়ে আসছে সবদিক। শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে চারপাশ থেকে! হঠাৎ হাটুর উপর হাত রেখে হাপাতে শুরু করে সে। তার অবস্থা দেখে ফারাবী বলল,
- আপনার আবার কি হলো?
- ক্ষুধার জ্বালায় আর হাঁটতে পারছিনা।
আশেপাশে চেয়ে দেখলো ফারাবী। কি যেন অনেক খোঁজাখুঁজি করছে সে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা সাপ মেরে নিয়ে আসে ফারাবী। সাজিয়া এসব দেখে বলল,
- এই এসব কি? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?
- এখানে এর বেশি, আর কিছুই নেই। So, eat this!
- What? দূরে সরেন! আপনি খান এসব! আমি না খেয়েই থাকবো।
- সত্যি খাবেননা?
- এটাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যান, আমার ঘৃণা করছে!
আর কিছু না বলেই কামড় দিয়ে এক টানে সাপটির মাথা ছিঁড়ে ফেলে ফারাবী! তা দেখে কিছুটা পেছনে সরে গেল সাজিয়া। ফারাবী একটা গাছের নিচে বসে দাঁত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেল পুরো সাপটিকে! খাওয়া শেষ করে উঠে গাছের পাশে থুথু ফেলে ফারাবী, থুথুর সাথে বেরিয়ে আসে সাপের রক্ত! আবারো হাঁটতে শুরু করে ফারাবী আর সাজিয়া। হাঁটতে হাঁটতে সাজিয়া বলল,
- আচ্ছা মানুষের কাজ যদি হয় তাহলে হঠাৎ করে কিভাবে এতকিছু করলো?
- কাজটা যেই করেছে, আগে থেকেই প্লেন করে করেছে!
- তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেেন যে সবকিছু আমি করেছি?
- আরে কি আজব! আপনার নাম কবে নিলাম!
- আপনি আমার সাথে অনেক আগে থেকেই ঝগড়া করেন, so........
সামনে কিছু একটা দেখেই সাজিয়ার মুখ চেপে ধরে ঝোঁপের আড়ালে চলে যায় ফারাবী!
- স্যার, কারো জিপিএস লোকেশন পাচ্ছিনা! না ক্যাপ্টেন ফারাবীর, না ক্যাপ্টেন শাহেদের। দুজনের জিপিএস সিসটেমই অফ! লেঃ নুসরাত বলল।
- What? তারা তো সব ঠিকঠাক করে গিয়েছিল!
- কোনো লোকেশনই পাচ্ছিনা যে যোগাযোগ করবো!
- স্যার শেষবার তাদের লোকেশন হাইওয়ের পূর্বের রাস্তায় তাদের লোকেশন দেখেছিলাম, সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ক্যাপ্টেন শাহেদ স্যারের জন্য শুনেনি।
- ওয়্যারলেসে কানেকশন পায় কিনা দেখুন, go go!
ক্যাপ্টেন স্বর্ণালীর কথা মতো কানেকশন দেখতে যায় লেফটেন্যান্ট নুসরাত।
- Hellow! Hellow! Captain Farabi, can you listen to me?
অপর প্রান্ত থেকে কোনো উত্তর এলোনা, কানেকশন নেই।
- স্যার, কোনো কানেকশন পাচ্ছেনা!
লেঃ নুসরাতের কথা শুনে নিজেও চেষ্টা করে দেখে ক্যাপ্টেন স্বর্ণালী। সেও লেঃ নুসরাতের মতো ব্যর্থ হতে শুরু করে।
অন্যদিকে,
- আমাকে এভাবে ধরলেন কেন? শত্রু নাকি আমি? ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- চুপ একদম চুপ! আপাতত মুখ বন্ধ রাখেন! ফারাবী বলল।
হঠাৎ শুকনো পাতার মচমচ শব্দ শুনতে পায় দুজন। কাধে রাইফেল ও টর্চ নিয়ে একজন বার্মিজ আর্মিকে তাদের পাশে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলো ফারাবী আর ক্যাপ্টেন সাজিয়া। ঝুপের আড়ালে ছিল বলে খেয়াল করেনি তাদের। পায়ে বাঁধা ধারালো নাইফটি খুলে হাতে নিল ফারাবী! ধীরে ধীরে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় লোকটির। গলার ধমনি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে লাল রক্ত। লোকটিকে টেনে ঝুপের আড়ালে নিয়ে আসে ফারাবী। কাপড় বদল করে বার্মিজ আর্মির কাপড় পড়ে নেয় সে।
- আশেপাশে মনে হয় আরো অনেকে আছে! এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা মোটেও নিরাপদ নয়। ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- পাশেই কোথাও তাদের ক্যাম্প আছে,আমরাই এদের ক্যাম্প নষ্ট করবো Ok? ফারাবী বলল।
- What? আমরা মাত্র দুজন।
- হ্যাঁ, আমরা দুজন একশনে নামবো। প্রথমে ক্যাম্পের গার্ডদের মেরে আমি তাদের সামনেই ক্যাম্পে প্রবেশ করবো, আর আপনি আশেপাশে গার্ড দিবেন। আমাদের সাথে তিনটি টাইম বম্ব আছে, যখনই তারা খেয়াল করবেনা ঠিক তখনই আক্রমণ করবো। Ready?
- Yes!
রাইফেল রেখে সামনা-সামনি যুদ্ধের জন্য কোমরে রাখা Type 92-Pistol হাতে নেয় দুজন। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায় ফারাবী আর ক্যাপ্টেন সাজিয়া। বার্মিজ সেনাবাহিনীর পোশাকে ফারাবীকে পুরো অন্যরকম লাগছে, যেন বাঙালির চেহারায় কোনো বার্মিজ! এদিকে ঝুপেড় আড়ালে পড়ে থাকে সেই বার্মিজ আর্মির মৃতদেহ!
সাভার ক্যান্টনমেন্ট,
- You Captain Runa, and you Lieutenant Surayia. ক্যাপ্টেন ফারাবী আর ক্যাপ্টেন শাহেদের গাড়ি নিখোঁজ, নিশ্চয়ই জানো? রুমেল বলল।
রুমেলের কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকায় লেফটেন্যান্ট সুরাইয়া ও ক্যাপ্টেন রুনা, সকালেই মিলিটারি হসপিটেলে যাওয়ার সময় বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিল ফারাবী। তাদের এমন অবস্থা দেখে রুমেল পুনরায় বলল,
- যতদিন তাদের পাওয়া যাবেনা ততদিন ক্যাপ্টেন ফারাবীর টিমটা রুনার নেতৃত্বে থাকছে, আর লেফটেন্যান্ট সুরাইয়ার নেতৃত্বে থাকবে ক্যাপ্টেন সাজিয়ার টিম। আমি ক্যাপ্টেন সজীবকে দায়িত্ব দিয়েছি ক্যাপ্টেন শাহেদের দল সামলে নিতে। আর এখন থেকেই তাদের দায়িত্বে তোমরা থাকবে Okay?
- Yes sir!
এই বলে রুমেলকে সেলুট দিয়ে বেরিয়ে আসে লেফটেন্যান্ট সুরাইয়া ও ক্যাপ্টেন রুনা। রুম থেকে বেরিয়ে ক্যাপ্টেন রুনা বলল,
- দেশের অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে যাচ্ছে, কখন কোথায় ফাঁদ পাতা থাকে টেরও পাওয়া যায়না। আর এখন তিনজন অফিসারই নিখোঁজ!
- স্যার, শেষবার শাহেদ স্যারকে কার সাথে যেন আস্তে আস্তে টেলিফোনে কথা বলতে দেখেছিলাম। লেফটেন্যান্ট সুরাইয়গ বলল।
থমকে দাড়ায় ক্যাপ্টেন রুনা! কিছুদিন যাবত সন্দেহজনক মনে হচ্ছে শাহেদকে। লেঃ সুরাইয়ার দিকে ঘুরে ক্যাপ্টেন রুনা বলল,
- মানে? তাহলে কি, সবকিছুর পেছনে শাহেদের হাত!
অন্যদিকে,
হাতের দড়ি খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সাব্বির, সামনেই বসে সিগারেট টানছে একজন বার্মিজ সৈনিক। হঠাৎ বার্মিজ সৈনিকের রাইফেলের মাথায় লাগানো বেয়নেটটা চোখে পড়লো সাব্বিরের! কিছুক্ষণ ভেবেই দুপা দিয়ে শক্ত করে গলা চেপে ধরলো বার্মিজ সৈনিকের! কিছুক্ষণ ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে যায় বিশাল দেহটি। রাইফেলটা পা দিয়ে কোনোরকম টেনে হাতে ধরে দড়ি কেটে ফেলে সাব্বির! দড়ি খুলে আশেপাশে কি যেন খুঁজলো সে। হঠাৎ তার চোখে পড়ে গ্রিল ছাড়া জানালাটি। জানালার কাছে গিয়ে বাইরে কেউ আছে কিনা দেখলো সাব্বির, কেউ নেই নিচে। জানালার নিচে লাগানো রডগুলো বেয়ে নিচে নেমে আসে সাব্বির।
এদিকে ক্যাম্পের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে ফারাবী আর ক্যাপ্টেন সাজিয়া। তবে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সাব্বির যেই বার্মিজ ক্যাম্পে ছিল এটা সেই ক্যাম্পের পুরোপুরি বিপরীতে। হঠাৎ তাদের দিকে একটা মিলিটারি জীপ আসতে দেখে চট করে আড়ালে চলে যায় ক্যাপ্টেন সাজিয়া! ফারাবীকে দেখেই থেমে যায় মিলিটারি জীপটা। জীপের উপর থেকে বার্মিজ ভাষায় ফারাবীকে কি যেন বলল একজন সৈনিক! "কিয়াট"(মিয়ানমারের টাকার নাম) ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারলো না, মাথা নিচু করে চুপচাপ জীপটিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় ফারাবী, পুনরায় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজেদের পথের দিকে চলে যায় বার্মিজরা। বার্মিজ আর্মি অফিসারের ইউনিফোর্ম পড়া ছিল বলে কেউ চিনতে পারেনি ফারাবীকে। জীপটা চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। হাতের ইশারায় ক্যাপ্টেন সাজিয়াকে এগিয়ে যেতে বলল ফারাবী। কিছুদূর এগুতেই ক্যাম্পের লাইট চোখে পড়ে ফারাবীর! সাথে সতর্ক দৃষ্টিতে পাহারারত গার্ডস! একটা ঝুপের আড়ালে দুজন বসে ফারাবী বলল,
- আমাদের অপারেশন শুরু! আপনি ডান দিকে যাবেন আর আমি বাম দিকে। গার্ডসদের মারার পর আমরা ভেতরে প্রবেশ করবো। পিস্তলে লেন্স লাগানো, So শব্দ হবার কোনো ভয় নেই।
- Best of luck Captain!
দুদিকে এগিয়ে যায় দুজন। নাইফ হাতে নিয়ে ঝোপের গা ঘেঁষেঘেঁষে তাদের পেছনে গিয়ে পৌঁছে ফারাবী। দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে গার্ডসদের মধ্যে একজন। হঠাৎ পেছন থেকে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফারাবী! মুখ চেপে ধরে গলার ধমনি কেটে ফেলল সে! লাল রক্তে ভরে যায় নাইফটি। অপর প্রান্তে দেয়ালের সাথে পিঠ ঘেঁষে পিস্তল হাতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। নিজের পাশেই বার্মিজের হাঁটাহাঁটির ছায়া দেখতে পাচ্ছে সে। পেছন থেকে গুলি চালিয়ে দেয় ক্যাপ্টেন সাজিয়া! মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গার্ডটি। ধারণা ভুল দাড়িয়েছে তাদের, কোনো ক্যাম্প নয় এটা। একটি খোলা শুধু দুটি তাবু, কিছু কামান ও জীপ ছাড়া কিছুই নেই। দূর থেকে তারা যে লাইটকে ক্যাম্পের লাইট ভেবেছিল, সেটা ছিল জীপের হ্যাড-লাইট। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, কোনো কারণে তারা কিছুক্ষণের জন্য এসেছে এখানে! পরিস্থিতি বুঝে ফারাবী বলল,
- এখানে একসাথে আমরা যেতে পারবোনা! দুধারে শুধু জঙ্গল দেখছি, সামনের রাস্তা একদম সোজা। আমি তাদের সামনে দিয়ে যাবো, আর আপনি আমাকে লক্ষ করে জঙ্গলে গা ঘেঁষে সামনে এগুতে থাকবেন! আর বম্বগুলো আমার কাছে দেন Quick!
ফারাবীর কথা মতো ব্যাগ থেকে বম্বগুলো ফারাবীর দিকে এগিয়ে দেয় ক্যাপ্টেন সাজিয়া! কোনোভাবে বম্বগুলো লুকিয়ে নেয় ফারাবী! দুদিকে এগিয়ে যায় দুজন, বুকে সাহস এনে কোনোরকমে শত্রুর সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ফারাবী। শত্রুদের বুটের শব্দ কানে এসে পৌঁছচ্ছে তার। কেমন যেন চাকমার মতো চেহারা বার্মিজদের, হাতে রাইফেল ও মাথায় শক্ত হেলমেট! সাথে জলপাই রঙের উর্দি!
অন্যদিকে ক্যাম্পের পেছনের খাল পার হয়ে মাত্র উঠেছে সাব্বির। নিজের বুটের পাশে রাখা Emergency Signal System থেকে কন্ট্রোল রুমে সিগন্যাল পাঠায় সে!
- স্যার, সাব্বির ইমার্জেন্সি সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। লেঃ নুসরাত বলল।
- লোকেশন কোথায় দেখচ্ছে?
ক্যাপ্টেন স্বর্ণালী বলল।
- স্যার ক্যাপ্টেন ফারাবী স্যাররা যেখানে নিখোঁজ হয়েছিল তার ঠিক অপজিটে!
- নিশ্চয়ই কোনো বিপদে পড়েছে সাব্বির! রেজিমেন্ট থেকে হেলিকপ্টার পাঠানোর ব্যবস্থা করো, Come on quick!
- Yes sir!
হাঁটতে হাঁটতে একটা ছোটখাটো ঘরের কাছে এসে পৌঁছায় ফারাবী। কাউকে দেখেই দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে যায় ফারাবী! দরজার সামনে একজন বার্মিজ অফিসার দাড়িয়ে মানিব্যাগে কি যেন করছে! কিছুক্ষণ পর মানিব্যাগটা পকেটে ঢুকিয়ে সামনের দিকে চলে যায় অফিসারটি! লোকটা চলে যেতেই বেরিয়ে আসে ফারাবী। তার পায়ের সামনে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখে হাতে নেয় সে, নিয়ে দেখে ১০০কিয়াট পড়ে ছিল। ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি! হুট করে ফিরে আসে বার্মিজ অফিসারটি! হয়তো পড়ে থাকা কিয়াটটি নিতেই এসেছিল শত্রুপক্ষের এই অফিসার! ফারাবীকে দেখেই চিনে ফেলে সে, এই ছেলে কোনো বার্মিজ নয়! লোকটা পিস্তল চেপে ধরতেই তার হাতে সজোরে লাথি মেরে পিস্তল দূরে ফেলে দেয় ফারাবী। লোকটির হাত চেপে ধরে পেটের মাঝে হাটু দিয়ে জোরে ধাক্কা দিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে সে। এক ধাক্কায় ফারাবী পাশে সাজিয়ে রাখা বেয়নেট বিশিষ্ট রাইফেলগুলোর উপর ফেলে বার্মিজ অফিসারটিকে!! লোকটির পিঠে দিয়ে বেয়নেট ঢুকে কলকলিয়ে বেরিয়ে রক্ত। কপালের ঘাম মুছে দরজার দিকে কিছুটা এগিয়ে যায় ফারাবী। হঠাৎ জঙ্গলের পাশ থেকে ফারাবীর কাছে ছুটে আসে ক্যাপ্টেন সাজিয়া। দরজা দেখে ফারাবী বলল,
- দরজায় তো তালা দেওয়া, সাথেও এমন কিছু নেই যে তালা ভাঙ্গো! আর এখানে শব্দ করে কিছু করলেই ধরা পড়ার কোনো সন্দেহই নেই!
- তাহলে, কোনো পিন থাকলেও তো হতো!
- এখানে কোনো পিন নেই। আমার সাথে আসুন, ঐ মরে পড়ে থাকা অফিসারটির কাছে চাবি থাকতে পারে।
মৃতদেহটির দিকে এগিয়ে যায় দুজন, ফারাবী লাশের পকেট দেখতে দেখতে বলল,
- আমি ছাবি খুঁজচ্ছি, আপনি আশেপাশে লক্ষ্য রাখুন!
ফারাবীর কথা মতো আশেপাশে পিস্তল ঘুরিয়ে কাভার দিচ্ছে ক্যাপ্টেন সাজিয়া! চাবি পেয়ে দরজার তালা খোলার চেষ্টা করে ফারাবী। ছাবি বদলিয়ে চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ জং ধরা এক ছাবির মাধ্যমে খুল

No comments:

Post a Comment

AD