Bangla Fishing

Banglafishing.com

AD

Friday, December 7, 2018

অনলাইন ওয়ার্ল্ড কাঁপানোর গল্প ব্ল্যাক আর্মি ২য় পর্ব

www.banglafishing.com


বাংলাদেশ বনাম মায়ানমার যুদ্ধ নিয়ে তৈরি করা  এই যুদ্ধ কাহিনী

ব্ল্যাক আর্মি

লেখা - Farhan 😜

(২য় পর্ব)😍

- হুম জানি!
- আচ্ছা আম্মু এখন রাখছি। মাত্র অফিস থেকে আসলাম, ইউনিফোর্মটাও খুলিনি।
- তাহলে এখন কেন ফোন দিলি? এখন রাখ পরে ফোন দিস! গাধা কোথাকার!
বলেই রাখি ফোন রেখে দেয়। ফোন সামনে এনে স্ক্রিনে হাত বুলিয়ে নেয় ফারাবী। তার আর সিনথিয়ার ছবি সেই স্ক্রিনে। তার কোলে ফারদিনা, সিনথিয়ার কোলে ফারদিন। এক নজরে ছবিটির দিকে চেয়ে আছে ফারাবী। ব্যাডরুম থেকে সিনথিয়া এসে বলল,
- কি ব্যাপার এখনো বসে আছো যে?
- ওহ হ্যাঁ ভুলে গিয়েছিলাম। ওরা দুজন ঘুমিয়েছে?
- হ্যাঁ ঘুমিয়েছে, যাও ফ্রেস হয়ে এসো।
- আচ্ছা, তোমার কথা না শুনলে তো কপালে ভাত জুটবে না!
- তুমি সবসময় মজা করো, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুতে আসো! পাগল!
সিনথিয়ার কথা মতো ফ্রেস হতে যায় ফারাবী। পরদিন বন্ধ বলে তেমন ব্যস্ততা ছিলো না তার।
বন্ধের পরদিন। ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া, রাত ৯:৫৪।
- ধ্যাত, কিছুতেই কোনো ভালো ইনফরমেশন পাচ্ছিনা!
পত্রিকাটা টেবিলে ছুড়ে ফেলল ক্যাপ্টেন সজীব।
- আজ নাকি প্রতিটি বর্ডারে বিজিবির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, তার সাথে যোগ হয়েছে বিভিন্ন ছোটখাটো ডিফেন্স ফোর্স! তবুও বার্মিজ জানোয়ারদের সাথে লেগেই আছে। লেফটেন্যান্ট শিহাব বলল।
- গতকাল নাকি বিজিবি সিপাহী নাজিম মারা গেছে, তার সাথে লেন্স নায়েক হামিদ। আর আমাদের দলের মুনতাসিরও। লেফটেন্যান্ট আয়শা বলল।
লেফটেন্যান্ট আয়শার দিকে চেয়ে ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল,
- লেফটেন্যান্ট আয়শা, গোলাগুলি কিন্তু তারা সরাসরি করছে না। So মারা যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়! ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- আমাদের রেজিমেন্ট কমান্ডার রুমেল স্যার All ready বলে দিয়েছে আমাদের প্রস্তুত থাকার জন্য, আর ঝামেলা হলেই আমাদের একশনে নামতে হবে। আজ সকালেই বিজিবি থেকে ডিজি অফিসার আল-আমিন সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছেন, যেকোনো মুহূর্তেই আমাদের যেতে হবে। ফারাবী বলল।
- শুনেছি হ্যাড কোয়ার্টার থেকে ১৫তারিখ সেনাবাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা নিবে। লেফটেন্যান্ট ফারিয়া বলল।
- আচ্ছা, Where is Captain Shahed? তাকে তো সকাল থেকেই দেখছি না। ক্যাপ্টেন রুনা বলল।
- হ্যাঁ তাইতো, ছুটি নিলো বোধ হয়! ক্যাপ্টেন সজীব বলল।
- ছুটি নিলে তো আমাদের জানার কথা, আর এই পরিস্থিতিতে কাউকে ছুটি দেওয়া সম্ভব নয় সেটা আগেই বলা হয়েছে! ফারাবী বলল।
- উফ এসব কথা বাদদেন। আগে আমাদের কথা শেষ করি। ক্যাপ্টেন সাজিয়া বলল।
- Right Sajiya. So, get ready for action. তার আগে বর্ডারের কাছের মানুষদের দূরে সরাতে হবে, তারপরই একশন। বর্তমানে প্রায় মানুষ বর্ডার থেকে বেশ দূরে আশ্রয় নিয়েছে। ফারাবী বলল।
- এভাবেই চলতে থাকলে তো বর্ডারের আশেপাশের মানুষের ক্ষতি হতে কতক্ষণ? লেফটেন্যান্ট ফারিয়া বলল।
লেফটেন্যান্ট ফারিয়ার দিকে চেয়ে ফারাবী বলল,
- এভাবে আর কতদিন লেগে থাকবে, আর্মিরা যখন ঝাঁপিয়ে পড়বে....
কথা শেষ করতে পারলো না ফারাবী। দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠে সবাই,
- Sorry to distrub you! শাহেদ বলল।
- ব্যাপার না, আমরা মিয়ানমারের বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। ফারাবী বলল।
- Is it?
- Oh yes!
- Don't waste your time like this, মিয়ানমারকে চেলেন্জ করোনা।
শাহেদের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে আছে সবাই। হঠাৎ ক্যাপ্টেন সজীব বলল,
- Hey Shahed what are you talking about? সজীব বলল।
- কিছু না, bye! শাহেদ বলল।
- Bye Shahed. ফারাবী বলল।
সবার দিকে ভ্রু তুলে তাকিয়ে দরজাটা খুলে ঠিক আগের মতো চলে গেল ক্যাপ্টেন শাহেদ। শাহেদের কান্ড দেখে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে সবাই।
অন্যদিকে, জানালা দিয়ে বাইরের ব্যস্ত শহর দেখছেন রেজিমেন্ট কমান্ডার রুমেল। সময় যত এগুচ্ছে, ততই যেন শহরটা জনমানুষ শুণ্য হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সৈনিক সাব্বির এসে সেলুট দেয় রুমেলকে।
- সাব্বির বসো, তোমরা যে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলে সেখানের কি অবস্থা? রুমেল বলল।
- স্যার, অধিকাংশ বিজিবিই, বিশেষ করে সিপাহীদের অবস্থা খুব করুণ।
- আর মুনতাসির কিভাবে আহত হয়েছিল?
- যখন গোলাগুলি শুরু হয়, তখন সে বাইরে ছিল। তাই আর কি......
কথা শেষ করতে পারেনা সাব্বির, দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে সে। যে মুনতারিরের সাথে কত মজা করতো, সেই মুনতারির আর নেই। হঠাৎ তার পাশে রাখা টেলিফোনের শব্দে চমকে উঠে রুমেল ও সাব্বির। রুমেল সাব্বিরের দিকে চেয়ে বলল,
- ঠিক আছে, আজকের মতো আসতে পারো।
- Thank you sir!
রুমেলকে সেলুট দিয়ে চলে যায় সাব্বির।
টেলিফোন কানে লাগাতেই চোখ দুটো বড় হয়ে যায়, কপালে জমতে থাকে ফোটা ফোটা ঘাম, চোখের উপরের ভ্রুগুলো কুচকে আসে তার। বিজিবির ডিজি অফিসার আল-আমিন খবর দিয়েছে, বার্মিজ সেনাবাহিনী সমস্ত বাংলাদেশ দখল করার জন্য এগিয়ে আসছে, সাথে আনছে ভারি অস্ত্র ও দানবিয় ট্যাংক! টেলিফোন রেখে ছুটে এসে ইমারজেন্সি সিগন্যাল পাঠায় রুমেল!
- একি হচ্ছে? ক্যাপ্টেন সজীব বলল।
- এটাতো ইমারজেন্সি সিগন্যাল! (ফারাবী বলল।
সিগন্যাল শুনে ছুটে যায় সবাই। বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে পুরোপুরি প্রস্তুত হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী! সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরকে সীমান্তের আশেপাশে পজিশন নিতে বলা হয়। তবে খুব দেরি করে ফেলেছে তারা। রওনা হয়েছে শত্রু পক্ষ, সাথে নিয়ে এসেছে যুদ্ধ বিমান! সীমান্তের আশেপাশের ক্যান্টনমেন্টগুলো থেকে দ্রুত আর্মি পাঠানো হয় বর্ডারে। তখন শুধু সেনাবাহিনীই প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশের। কিছু দূরই সীমান্তের দিকে তাক করে আছে আর্টিলারির কামানের নলগুলো। তার একটু সামনেই BD-08 হাতে সতর্ক দৃষ্টিতে দাড়িয়ে সীমান্তের দিকে তাকিয়ে আছে মেজর মাহফুজ। এই অবস্থায় বাসায়ও কেউ কিছু জানাতেও পারেনি সে, এতক্ষণে হয়তো সবার বাসায় খবর পেয়েছে যে, তারা আর সেনানিবাসে নেই। সেনানিবাস থেকে সরাসরি তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সীমান্তে। হাতের ইশারায় লেফটেন্যান্ট সৌরভকে কি যেন বুঝাতে চাইলো মেজর মাহফুজ, লেফটেন্যান্ট সৌরভ মাথা নাড়িয়ে বুঝালো "হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত"। তার কিছু দূরেই রাইফেল হাতে এদিকসেদিক তাকাচ্ছে সৈনিক নাইম। হঠাৎ বিমানের বজ্রপাতের মতো শব্দে চমকে উঠে সবাই! একসাথে ৭-৮টি বার্মিজ যুদ্ধ বিমান থেকে একের পর এক বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেয় বিজিবিদের!! তার সাথে গুলিবর্ষণ শুরু হয় কিছু দূর থেকে। বোমা মেরে বিজিবিদের ধ্বংস করে দিয়ে বর্ডার ক্রস করে ঢুকে পড়ে বার্মিজ সেনাবাহিনী! লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফের গুলি চালানোর আদেশের সাথে গর্জে উঠে সবার রাইফেল! এভাবে বিমান থেকে ভয়াবহ আক্রমণ করা হবে বলে কেউ কল্পনাও করেনি।
বাইনোকুলারে দেখছে আর্টিলারি ক্যাপ্টেন ইমন। সামনের কিছুটা উচু জায়গায় দাড়িয়ে দেখছে সে, তার পেছনেই নল তাক করে এক সারিতে দাড়িয়ে আছে আর্টিলারি কামান। বিমান আসতে দেখে ফায়ার বলে দ্রুত নিচে নেমে আসে ক্যাপ্টেন ইমন। সে নিচে নামতেই কামানের বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠে সমস্ত পরিবেশ। বিমানগুলো উড়ে এসে বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেয় আর্টিলারির প্রতিটি কামান! বোমার আঘাতে দূরে ছিটকে পড়ে ক্যাপ্টেন ইমন। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেও, তার ডান পা ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত! যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠে ক্যাপ্টেন ইমন। গ্যাস ও বোমার কারণে সহজে পালটা জবাব দিতে পারছে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনী! তাদের চোখ ফাকি দিয়ে প্রায় সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে বার্মিজ সেনারা.............
- এই মইনুল! খবর পেয়েছিস? সমস্ত বাংলাদেশে বার্মিজ আর্মি প্রবেশ করে ফেলেছে।
- শুনলাম বর্ডারের আশেপাশের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীরা টহলে নেমেছে। আগামীকাল অন্যান্য ক্যান্টনমেন্ট থেকেও আর্মিদের সরাসরি যুদ্ধে নামানো হবে, তার সাথে আমাদেরও!
মইনুলের দিকে চেয়ে তাহসির বলল,
- যেকোনো মুহূর্তে বার্মিজ নৌবাহিনীও আক্রমণ করতে পারে, So আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে মইনুল!
- আজ খুব বেশি রোদ পড়ছে, তাইনা?
- রোদের কথা বলে কিই বা করবি বল? ওই পাখিগুলোকে দেখছিস?
সাদা see bird এর দিকে দেখিয়ে বলল তাহসির।
- হ্যাঁ রে, খুব সুন্দর তাইনা?
- তারা যেভাবে সমুদ্রের বুকে স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়ায়, আমরাও ঠিক সেভাবেই উড়ে বেড়াতে চাই। একবার কোনো অপারেশনের চান্স, তারপর তুই দেখবি মইনুল!
- তুই ঠিক কি করতে চাস বলতো?
- কিছুই না। অপেক্ষা, শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা! শুধু একটা কথা মাথায় রাখবি মইনুল, যেখানেই যাই, সেখানেই যেন একসাথে থাকে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মইনুল বলল,
- যদি বিমানের পাইলট হতাম, তবে এখনি যুদ্ধ বিমানে আর্মামেড লোড করে, ধ্বংস করে দিয়ে আসি তাদের সমস্ত দেশ!
- আমরা গেলে সাতাড় কেটেই যাবো, পাগলামী না করে চল রুমে চল। আর এই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই, কোনো মাছ লাফিয়ে এসে তোর মুখের ভিতর ঢুকবে না! চল চল!
মইনুলকে টেনে জাহাজের ভেতরে নিয়ে যায় তাহসির।
রাত ১:০৩।
টেবিলে বসে টেবিল-ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে কি যেন লেখালেখি করছে ফারাবী। বারান্দার জানালার সাথেই লাগানো টেবিল, বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে সিনথিয়া। চাঁদের আলোয় ফারাবীর সাদা শার্টটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সিনথিয়া ফারাবীর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বলল,
- কাল তুমিও চলে যাবে তাইনা?
- হুম, যাওয়া ছাড়া যে কোনো উপায় নেই। So, যেতে বাধ্য।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো সিনথিয়া। মোটেও মিথ্যা বলেনি ফারাবী। ফারাবীর দিকে চেয়ে সিনথিয়া বলল,
- তোমার সাথে আর কেকে থাকবে?
- আমাদের রেজিমেন্টের সবাই!
- বলতে চাচ্ছিলাম, তোমার সব খবর জানবে এমন কেউ?
- হ্যাঁ, সাব্বির থাকবে। সিগন্যাল কোর থেকে তাকে আমার দলেই দেওয়া হয়েছে। আর তুমি তো জানোই, সাব্বিরকে কতটা ভালোবাসি? তাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখি।
- সাব্বির ভাই তোমার সাথে থাকবে?
- হ্যাঁ। আর আমার লক্ষ্য, একদম সম্মুখে গিয়ে যুদ্ধ করা!
ফারাবীর কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায় সিনথিয়া। ফারাবীর দিকে চেয়ে উত্তেজিত হয়ে সিনথিয়া বলল,
- তুমি আমাদের কথা একবারও ভেবেছো? তোমার কিছু হলে ফারদিন, ফারদিনাকে নিয়ে আমি কিভাবে থাকবো?
ফারাবী কলম কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ পর বলল,
- তুমি শুধু শুধু চিন্তা করো, আমার কিছু হবেনা।
- তুমিতো বলেই শেষ, গতবার মিশনে গিয়ে কি হয়েছিল মনে আছে?
- ওসব কথা বাদদাও তো। আমার কিছু কাজ আছে, তুমি ফারদিন, ফারদিনাকে নিয়ে ঘুমাতে যাও।
কিছু বলল না সিনথিয়া, এক নজরে চেয়ে আছে ফারাবীর দিকে। সিনথিয়ার যাচ্ছেনা দেখে তার দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দেয় ফারাবী। কিছু না বলে ঘুমাতে চলে যায় সিনথিয়া।
ভিডিও কলে তাসকিয়ার সাথে কথা বলছে মাঈনুল। ব্যাচম্যাটরা সব প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। তাসকিয়া বলছে,
- তোমার সেই গোলাপটা আজও আমার কাছে আছে জানো? গোলাপ বলতে, শুধু শুকনো পাপড়িগুলোই আছে।
- যত্নে রেখো, কাল থেকে কথা হচ্ছেনা। হয়তো কখনোই হবেনা!
- ধুর, বাদদাও ওসব কথা। কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে।
- মিস করবে না আমায়?
- আমি জানি, ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে। তোমার আমার দুজনেরই। কিন্তু বিশ্বাস করো, যদি তোমাকে থামাতে পারতাম, তাহলে কখনোই যেতে দিতাম না। মাত্র নতুন চাকরি পেয়েছো। আর শুরুতেই এই অবস্থা।
এটুকু বলে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে তাসকিয়া। তাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পায়না মাঈনুল। কান্না থামানোর চেষ্টা করে তাসকিয়া বলল,
- তবুও তুমি যে দেশের জন্য যাচ্ছো, এতে আমি খুশি, অনেক খুশি। I love you Mainul, Love you a lot! Love you more then my life!
মাঈনুল কিছু বলার আগেই পাশের ব্যাড থেকে তাহসির বলল,
- ঐ হালা মাঈনুল মদ গাজা খাইছস নাকি? এত রাতে একা বকবক করছিস কেন! ঘুম যা! Sleeping talking এর রোগ হয়েছে!
ভিডিও কল অফ করে দেয় মাঈনুল। বুঝতে বাকি রইলো না, তাহসির নিজেই ঘুমের মধ্যে কথা বলছে। গর্বিত নয়নে নিজের হেঙ্গারে ঝুলন্ত নেভি ইউনিফোর্মটার লেগোর দিকে তাকালো মাঈনুল।
রাত তিনটের এলার্ম বাজছে ফারাবীর টেবিলে রাখা ঘড়িতে। কাজ করতে করতে কবে যে টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে, বুঝতেই পারেনি ফারাবী। ঘড়ির এলার্ম বন্ধ করে লেখাগুলোর দিকে তাকালো ফারাবী। হ্যাঁ, সব কাজ শেষ। পেছন ঘুরে ব্যাডরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে, ফারদিন-ফারদিনাকে নিয়ে সিনথিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে। ড্রয়ার থেকে কালো রঙের ডায়েরিটা বের করলো ফারাবী। যাতে কিনা এতদিন কিছুই লিখেিন, কিছুদিন আগেই গিফট করেছে সিনথিয়া। আজ এই ডায়েরিতেই চিঠি লিখে যাবে ফারাবী।
শহরটা জুড়ে এখন নীরবতা, ঘুমিয়ে আছে সব পাখি, ঘুমিয়ে গেছে ফারদিন আর ফারদিনাও। মাঝেমাঝে অদ্ভুত কিছু দেখেই হয়তো চেঁচামেঁচি করছে পথের কুকুরেরা। আর শুধু এই রাতটিই, এই রাতই পোহানোর অপেক্ষা। নিজেকে বাংলার বাঘ প্রমাণ করতে উদগ্রীব হয়ে আছে সমস্ত রেজিমেন্ট। যুদ্ধ বিমানে আর্মামেড লোড করে হয়তো আকাশপানে চেয়ে আছে পাইলটেরা! নাবিকেরা হয়তো ম্যাসিন-গান ও কামান তাক করে রেখেছে সাগর সীমার দিকে। সাথে আমিও, বিভোর হয়ে আছি যুদ্ধের আশায়। আমি নিষ্ঠুর, আমি স্বার্থপর! তোমাদের কথা না ভেবে দেশের কথা ভাবছি! আমি মারা গেলে তোমাদের কি হবে, সে কথা ভাবারও সময় আমার কাছে নেই! ফারদিনের সাথে খেলনার সৈনিক দিয়ে কত খেলতাম, আজ সেই খেলনার সৈনিক আমি। বার্মিজ বাহিনী বোমা ফেলে ধ্বংস করে দিবে আমাদের সবকিছু! আমি কখনোই ক্ষমা করবো না, কখনোই না।
এটুকু লিখে কলমটা ডায়েরির উপর রেখে ব্যাডরুমের দিকে গেলো ফারাবী। ব্যাডরুমের দরজায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে সিনথিয়ার নিষ্পাপ ঘুমন্ত চেহারার দিকে। আবারো পুনরায় টেবিলে বসে লিখতে শুরু করে ফারাবী,
আমায় ক্ষমা করো সিনথিয়া, তোমার কথার অবাধ্য হই বলে। তুমি হাজার কাঁদলেও ফিরে তাকাতে পারছি না তোমার দিকে। যদি আমি ফিরে আসি, তবে আমি কথা দিচ্ছি, কখনোই তোমার একটা কথারও অবাধ্য হবোনা। কাল আমি যুদ্ধে যাবো! বার্মিজদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলবো! তুমি চাইতে, যেন আমি একজন সাহসী অফিসার হই। কাল আমি সেই সাহসীকতার পরিচয় দিতে যাচ্ছি! তাদের কোনো চিহ্নও রাখবো না আমার দেশে। দলের সবার আগে শত্রুর অস্ত্রের সামনে বুক পাতবো। আমি ভয় পাইনা, ভয় পাইনা অস্ত্র, ভয় পাইনা বোমা! ক্ষমা করো সিনথিয়া, ক্ষমা করো এই অতৃপ্ত যোদ্ধাকে!
ইতি
তোমার ফারাবী
কলমটা মধ্যে রেখে ডায়েরিটা বন্ধ করে দেয় ফারাবী।
ভোর ৪:০০! ফারাবীর যাওয়ার সময় হয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়েছে ফারাবী, কিছু দূর এগিয়ে পিছু ফিরে তাকালো সিনথিয়ার দিকে। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে সিনথিয়া, কিছু মুখে আগের সেই হাসি নেই। ফারাবীও মিথ্যা হাসি দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেল তার কর্মস্থলে।
ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিল সিনথিয়া, নতুন সেভ করা নম্বরে ডায়াল করলো। কিছুক্ষণ পর রিসিভ হয় ওপাশ থেকে,
- হ্যালো?
- হ্যালো সাব্বির ভাই? (সিনথিয়া)
- কে আপনি?
- ফারাবীকে চিনেন?
- ওহ হ্যাঁ ফারাবী স্যার! আপনি সিনথিয়া ম্যাডাম মনে হয় তাইনা? আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
- ফারাবী যাওয়ার আগে লুকিয়ে তার ফোন থেকে নম্বর নিয়েছি। আচ্ছা শুনুন, যার জন্য ফোন করেছিলাম। সবসময় তার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন প্লিজ!
- ওহ এই ব্যাপার! ঠিক আছে আমি ওনার সাথেই থাকবো।
- একটু খেয়াল রাখবেন প্লিজ, গতবারের মিশনে যা হয়েছিল! আর তাকে কিছু বলবেন না।
এরমধ্যেই ফারাবীকে সামনেই দেখতে পায় সাব্বির!
- না-না কিছু হবেনা, আর আপনি টেনশন ফ্রি থাকুন ঠিক আছে? ফারাবী স্যার আমার সামনেই! সাব্বির বলল।
- কি অবস্থা সাব্বির? কার সাথে কথা বলছো! ফারাবী বলল।
সিনথিয়ার ফোন কেটে দিয়ে সেলুট দিয়ে সাব্বির বলল,
- না স্যার, কিছু না Wrong number!
সৈনিক স্বপ্নীলকে দেখে সাব্বির বলল,
- ওইতো স্বপ্নীল! স্বপ্নীল দাড়া!
স্বপ্নীলকে ডেকে ডেকে চলে যায় সাব্বির। আর্মেড কোরের সৈন্যদের ট্যাংকের চেইনে কাঁপছে সমস্ত পরিবেশ। সিগন্যাল কোর প্রস্তুত হয়েছে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। ক্যাপ্টেন শাকিরের আন্ডারে দেওয়া হয়েছে একদল আর্মেড ট্যাংক! ফারাবীর সহকর্মী হিসেবে কাজ করছে ক্যাপ্টেন স্বর্ণালী। অন্যদিকে সাগর সীমায় টহলে পাঠানো হয় নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ। সীমান্তে কড়া নজরদারির জন্য সীমান্তে নতুনভাবে তৈরি করা হয় বিজিবি ক্যাম্প। ইতিমধ্যে রেজিমেন্টে খবর আসে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করেছে বার্মিজ সেনাবাহিনী! গাড়িতে উঠার আগে শাহেদকে দেখতে পায় ফারাবী,
- Hey Shahed, Come here!
কোনো কথা বলেনা শাহেদ, ফারাবীর পাশে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।
- শাহেদ? এই শাহেদ!
পেছন ফিরে ফারাবীর দিকে চেয়ে আবার হাঁটা ধরে ক্যাপ্টেন শাহেদ। অবাক হয়ে যায় ফারাবী। আগে মোটেও এমন ছিলোনা শাহেদ। হঠাৎ ফারাবীর কাধে হাত রেখে ক্যাপ্টেন সজীব বলল,
- কি ভাবছিস? আরে এটাই reality!
কি বলবে ভেবে পায়না ফারাবী। আগে একসাথে কত সময় কাটাতো ফারাবী আর শাহেদ। আর আজ, সবই স্মৃতি! আর কিছু না ভেবে হাতে ধরা হ্যালমেটটা মাথায় পড়ে গাড়িতে উঠে পড়ে ফারাবী।

পরবর্তী পর্ব অনলাইন ওয়ার্ল্ড কাঁপানোর গল্প ব্ল্যাক আর্মি পর্ব তিন

No comments:

Post a Comment

AD