www.banglafishing.com |
................অপারেশন ব্ল্যাক ইয়াংগুন............
লেখা - Farhan Ahmed Farabi (amc)
(পর্ব এক)[_yf]
রাত প্রায় ১০:৩০। নিস্তব্ধ পরিবেশ। রাত বেশি না হলেও, মনে হচ্ছে নিশি রাত। বিশাল লম্বা রাস্তা। কালো আকাশে বড় গোল চাঁদ যেন এক প্রকান্ড ছিদ্র! সামান্য রাস্তা বলাটা এক প্রকার বোকামি, এক বিশাল হাইওয়ে। হাইওয়ের দু ধারে শুধু গাছপালা। ছোটখাটো জঙ্গল বললেই চলে। সন্ধ্যার পর থেকেই শেয়ালের খাক ভেসে আসে সেখান থেকে। রাতের আধার ছিঁড়ে বার্মিজ বাহিনীর মিলিটারি ট্রাকের হ্যাডলাইটের আলো এগিয়ে আসছে। রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা পেয়ে বেশ স্পিডে চলছে মিলিটারি ট্রাকগুলো। হাঁটতে হাঁটতে একটি ব্রিজের সামনে এসে দাঁড়ায় তিনজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্বার যোদ্ধা। ঝিঝি পোকার ডাকে ভূতুরে লাগছে পরিবেশটাকে। দুজনের পরনে জলপাই রঙের উর্দি, মাথায় হ্যালমেট ও হাতে রাইফেল। অন্যজনের মাথায় ক্যাপ, কোমরে রাখা রিভলবার, পঞ্চাশ-ষাট বছর বয়সের ছাপ তার মুখে। তাদের মাঝে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল,
- এইযে ব্রিজটা দেখছো, এটা এই এলাকায় থাকা একটা মাত্রই ব্রিজ। যে যত দূর থেকেই আসুক না কেন, এই ব্রিজ ছাড়া সেদিকে যাওয়া অসম্ভব। লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
এই বলে একটি সিগারেট ধরালো লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম। কিছুক্ষণ পরই মুখে থাকা ধোঁয়াগুলো উড়িয়ে দিলেন বাতাসের মাঝে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাপ্টেন ফারাবী পরিবেশটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। তার দৃষ্টি সতর্ক, চঞ্চল! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হলেও, গেরিলা বাহিনীর একজন সাহসী যোদ্ধা ক্যাপ্টেন ফারাবী। হঠাৎ কিছুর শব্দ শুনতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে ও! বলল,
- স্যার! আপনি কিছু শুনতে পাচ্ছেন?!
- ট্রাক! লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
- নিশ্চয়ই বার্মিজদের উপস্থিতি আছে! Everybody be careful! ক্যাপ্টেন রুহুল বলল
তাড়াহুড়ো করে একটি বড়সড় ঝুপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে তিনজন। ঠিক তখনই তাদের চমকে দিয়ে এক সারিতে সৈন্য ভর্তি পাঁচটি মিলিটারি ট্রাক যায় কিছু দূর থেকে! প্রতিটা ট্রাকের দরজায় মিয়ানমারের চিহ্ন আঁকা, যা বার্মিজ বাহিনীর চির চেনা প্রতিক। ট্রাকগুলো চলে যেতেই ফারাবী কর্নেল আশরাফ দিকে চেয়ে বলল,
- Great, আমরা শত্রুপক্ষের ক্যাম্পের বেশ কাছে এসে পড়েছি। What's the plan now sir?
- Listen carefully, ফারাবী যাবে ক্যাম্পের সামনের দিকে। ক্যাম্পের শেষ মাথায় গিয়ে তাদের যতরকমের অস্ত্র আছে, সব ডিস্ট্রয় করতে হবে। কিভাবে যেতে হবে সেটা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে দিতে হবেনা?লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
- Yes sir! ফারাবী বলল
- রুহুল, তুমি ক্যাম্পের দিকে অন্য রাস্তার মাধ্যমে এগুবে। ক্যাপ্টেন জন যেদিকে যাবে, তার ঠিক বিপরীতে যাবে। এবং কোনো প্রকার সমস্যা হলে, ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করবে। আশা করি আমরা সবাই ফিরে আসবো। Now go! কর্নেল আশরাফ বলল
- Sir!
লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তমের দেওয়া নির্দেশ মতো রাইফেল হাতে নিচু হয়ে দুদিকে এগিয়ে যায় ফারাবী ও ক্যাপ্টেন রুহুল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘন ঝুপের আড়ালে মিশে যায় তারা। কোমর থেকে রিভলবারটি বের করে ম্যাগজিন দেখে নেয়, ছয়টি গুলি দেখে ম্যাগজিন লাগিয়ে সামনে থাকা কাঠের বেড়াটি পার করে সে।
দুদিন আগে,
বিমানে প্যারা জাম্পের জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে ফারাবী সহ আরো বিশজন। আকাশ পুরোপুরি মেঘ মুক্ত ছিল, চাঁদের আবছা আলো এসে পড়ছিল বিমানের উপর।
সেপ্টেম্বর মাসে বার্মিজ বাহিনী বাংলাদেশ আক্রমণ করে, সেখান থেকেই এক ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু। ধীরে ধীরে বাংলাদেশও যুদ্ধে যোগ দেয়, সমস্ত দেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় রণক্ষেত্র। মিয়ানমার বাহিনীর মাথায় চেপেছিল দেশ দখলের স্বপ্ন। স্বপ্ন নয় বরং, একের পর এক হত্যার নেশা! তখন থেকেই একের পর এক রহিঙ্গা হত্যা শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ ইয়াংগুন হামলার পর শেষ রক্ষা হয়নি বার্মিজ বাহিনীর! শেষের দিকে হিংস্র বাঘের মতো রূপ নিবে বাংলাদেশ, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না বার্মিজ বাহিনীদের। তখন থেকেই নিজের দেশ রক্ষার জন্য বুকে তোলপাড় শুরু হয় কমান্ডো ক্যাপ্টেন ফারাবীর।
হঠাৎ বিমানের দরজার পাশে লাল রঙের লাইটটি জ্বলে উঠলো, এটি প্যারা জাম্পেরই সিগন্যাল। উঠে দরজার পাশে এসে দাঁড়ায় ফারাবী, নিচের দিকে তাকায় ও। সাধারণ কোনো মানুষ হলে এই নিচু দৃশ্য দেখে নিঃসন্দেহেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। ফারাবীর সাথে বাকি সৈন্যরাও প্যারা জাম্পের জন্য এক সারিতে দাঁড়ায়। তবে বিপদ কখনো বলে আসে না। বিমানের পাইলট মাহমুদ হাসানের পাশেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাকে বসে ছিল একজন বার্মিজ আর্মি! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফোর্মে বলে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। সবাই যখন প্যারা জাম্পের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তখন সে তার ইউনিফোর্মের ভেতর লুকিয়ে রাখা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটি বের করে গুলি চালিয়ে দেয় মাহমুদের উপর! সিটের একপাশের কাত হয়ে পড়ে থাকে মাহমুদের নিথর দেহ। শীতকাল না হলেও, এত উপরে বিমানে সারিতে দাঁড়ানো অনেকেই ঠান্ডায় কাঁপছে। হঠাৎ পেছন থেকে প্রচন্ড গুলির শব্দ! মুহূর্তেই চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে অনেকে। উত্তেজিত হয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই BD-08 হাতে সেই বার্মিজকে দেখতে পায় ফারাবী। রাইফেল হাতে দেখেই বুঝতে বাকি রইলো না, সে শত্রুপক্ষের লোক। দ্রুত পা ফেলে দৌড়ে গিয়ে তার রাইফেল চেপে ধরে ফারাবী। তার হাতের জোরে ফারাবী সামান্য পিছিয়ে পড়ে। দুজনের তীব্র হাতাহাতির কারণে গুলি চলে গিয়ে বিমানের প্রচন্ড ইঞ্জিনে আঘাত হানে! দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে বিমানের ডান পাখায়। হঠাৎ ফারাবী বার্মিজ সৈন্যটির হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে রাইফেল দিয়ে সজোরে তার মাথায় আঘাত করে! উপুড় হয়ে সিটের উপর পড়ে যায় ও। এই সুযোগে রাইফেল তাক করে এক দফা গুলি চালিয়ে দেয় ফারাবী। বার্মিজ সৈন্যটির রক্তাক্ত দেহটি পড়ে রইলো সিটের উপর। ফারাবী পেছন ফিরে উত্তেজিত কন্ঠে বাকিদের বলল, তোমরা সবাই বেরিয়ে পড়ো! তার নির্দেশ মতো বিমান থেকে একের পর এক লাফিয়ে পড়ে কমান্ডোরা। বিমানের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা লাশগুলোর কাছে ছুটে গেল ফারাবী। হাটু গেড়ে বসে একএক করে সবার পাল্স দেখতে লাগলো। তবে সময় হলো না। বিকট শব্দে বিমানের পাখা পুরোপুরি ব্লাস্ট হয়ে পড়ে! হাত দিয়েআগুন থেকে নিজের মুখ আড়াল করে ফারাবী। উপায় না পেয়ে দৌড়ে বিমানের দরজার পাশে যায়। জাম্প করার আগ মুহূর্তে শেষবারের মতো মেঝেতে পড়ে থাকা লাশগুলোর দিকে এক পোলক তাকিয়ে বিমান থেকে খোলা আকাশের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও।
নিচ থেকে ফারাবীকে প্যারা জাম্প করতে দেখে প্রায় পাগলের মতো ছুটে যায় লেফটেন্যান্ট অমিত। শক্ত বুটের শব্দে যেন কেঁপে উঠছে সব। প্যারাশুট নিয়ে নিচে নামতেই বাতাসের তীব্র বেগে মাটিতে আছড়ে পড়ে ফারাবী। ফারাবীর সামনে এসে স্যালুট দিয়ে "সালাম স্যার" বলল লেফটেন্যান্ট অমিত। অমিতের এই চিন্তিত কালো মুখ দেখে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ফারাবী জিঞ্জেস করলো,
- কি হয়েছে anything wrong?
- স্যার ঘন্টা খানেক আগেই খবর আসলো বার্মিজ বাহিনী আমাদের উপর হামলা করতে আসছে! আমার মনে হয় স্যার, তারা কোনো বড়সড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
- বিমানেও আমাদের উপর হামলা হয়েছে। কিভাবে যেন শত্রুপক্ষের একজন আমাদের দলে ঢুকে পড়ে সাতজনকে হত্যা করে।আমাদেরই ইউনিফোর্মে আমাদেরই বিমানে ছিল অথচ, আমরা কেউই তাকে চিনতে পারিনি। ফারাবী বলল
- স্যার, এখন শুধু অপেক্ষা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবাই প্রস্তুত। এখন শুধু লক্ষ রাখতে হবে বার্মিজদের দিকে।
হঠাত কিছুটা দূরে গাড়ির হ্যাডলাইটের মতো একটি লাইট জ্বলে উঠে, সতর্ক হয়ে রাইফেল তাক করে আশেপাশে দৃষ্টি ফেলে ফারাবী! হঠাৎ বিকট শব্দের সাথে একটি বুলেট এসে লাগে লেফটেন্যান্ট অমিতের বুকে, ধপাশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও! চারপাশে শুরু হয় তীব্র গোলাগুলি! মেশিন-গানের অসহ্য শব্দে যেন কান ফেটে আসছে। ফারাবী হাঁটু গেড়ে বসে টেনে তোলার চেষ্টা করে লেফটেন্যান্ট অমিতকে।
- স্যার আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না, বার্মিজরা সবদিক ঘিরে আছে!
কথাগুলো বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লো অমিত। ফারাবী ওঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, "সবাই নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ফায়ার করো!" তীব্র গুলিবর্ষণে যেন কেঁপে উঠছে পরিবেশ। কিছুক্ষণ পরপর গুলিবিদ্ধ আহত সৈন্যদের চিৎকারে পরিবেশটা যেন আরো ভারি হয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মাঝেই প্রচন্ড গোলাগুলিতে পড়ে ভেঙে যায় বড় লাইটগুলো! তবে চাঁদের আলোয় বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে চারপাশ। দূর হলেও, স্পষ্ট শত্রুদের বাংকার দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের প্রায় ঘিরে ফেললেও, পলাশ ও অন্যান্য স্নাইপার-ম্যানরা একে একে উড়িয়ে দিতে থাকে বার্মিজদের। বার্মিজদের আচমকা আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরা প্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন সময় হঠাৎই, বার্মিজ বাহিনীর বাংকারে একসঙ্গে চার পাঁচটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়!
- এইযে ব্রিজটা দেখছো, এটা এই এলাকায় থাকা একটা মাত্রই ব্রিজ। যে যত দূর থেকেই আসুক না কেন, এই ব্রিজ ছাড়া সেদিকে যাওয়া অসম্ভব। লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
এই বলে একটি সিগারেট ধরালো লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম। কিছুক্ষণ পরই মুখে থাকা ধোঁয়াগুলো উড়িয়ে দিলেন বাতাসের মাঝে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাপ্টেন ফারাবী পরিবেশটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। তার দৃষ্টি সতর্ক, চঞ্চল! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হলেও, গেরিলা বাহিনীর একজন সাহসী যোদ্ধা ক্যাপ্টেন ফারাবী। হঠাৎ কিছুর শব্দ শুনতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে ও! বলল,
- স্যার! আপনি কিছু শুনতে পাচ্ছেন?!
- ট্রাক! লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
- নিশ্চয়ই বার্মিজদের উপস্থিতি আছে! Everybody be careful! ক্যাপ্টেন রুহুল বলল
তাড়াহুড়ো করে একটি বড়সড় ঝুপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে তিনজন। ঠিক তখনই তাদের চমকে দিয়ে এক সারিতে সৈন্য ভর্তি পাঁচটি মিলিটারি ট্রাক যায় কিছু দূর থেকে! প্রতিটা ট্রাকের দরজায় মিয়ানমারের চিহ্ন আঁকা, যা বার্মিজ বাহিনীর চির চেনা প্রতিক। ট্রাকগুলো চলে যেতেই ফারাবী কর্নেল আশরাফ দিকে চেয়ে বলল,
- Great, আমরা শত্রুপক্ষের ক্যাম্পের বেশ কাছে এসে পড়েছি। What's the plan now sir?
- Listen carefully, ফারাবী যাবে ক্যাম্পের সামনের দিকে। ক্যাম্পের শেষ মাথায় গিয়ে তাদের যতরকমের অস্ত্র আছে, সব ডিস্ট্রয় করতে হবে। কিভাবে যেতে হবে সেটা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে দিতে হবেনা?লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তম বলল
- Yes sir! ফারাবী বলল
- রুহুল, তুমি ক্যাম্পের দিকে অন্য রাস্তার মাধ্যমে এগুবে। ক্যাপ্টেন জন যেদিকে যাবে, তার ঠিক বিপরীতে যাবে। এবং কোনো প্রকার সমস্যা হলে, ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করবে। আশা করি আমরা সবাই ফিরে আসবো। Now go! কর্নেল আশরাফ বলল
- Sir!
লেফটেন্যান্ট কর্নেল উত্তমের দেওয়া নির্দেশ মতো রাইফেল হাতে নিচু হয়ে দুদিকে এগিয়ে যায় ফারাবী ও ক্যাপ্টেন রুহুল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘন ঝুপের আড়ালে মিশে যায় তারা। কোমর থেকে রিভলবারটি বের করে ম্যাগজিন দেখে নেয়, ছয়টি গুলি দেখে ম্যাগজিন লাগিয়ে সামনে থাকা কাঠের বেড়াটি পার করে সে।
দুদিন আগে,
বিমানে প্যারা জাম্পের জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে ফারাবী সহ আরো বিশজন। আকাশ পুরোপুরি মেঘ মুক্ত ছিল, চাঁদের আবছা আলো এসে পড়ছিল বিমানের উপর।
সেপ্টেম্বর মাসে বার্মিজ বাহিনী বাংলাদেশ আক্রমণ করে, সেখান থেকেই এক ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু। ধীরে ধীরে বাংলাদেশও যুদ্ধে যোগ দেয়, সমস্ত দেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় রণক্ষেত্র। মিয়ানমার বাহিনীর মাথায় চেপেছিল দেশ দখলের স্বপ্ন। স্বপ্ন নয় বরং, একের পর এক হত্যার নেশা! তখন থেকেই একের পর এক রহিঙ্গা হত্যা শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ ইয়াংগুন হামলার পর শেষ রক্ষা হয়নি বার্মিজ বাহিনীর! শেষের দিকে হিংস্র বাঘের মতো রূপ নিবে বাংলাদেশ, সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না বার্মিজ বাহিনীদের। তখন থেকেই নিজের দেশ রক্ষার জন্য বুকে তোলপাড় শুরু হয় কমান্ডো ক্যাপ্টেন ফারাবীর।
হঠাৎ বিমানের দরজার পাশে লাল রঙের লাইটটি জ্বলে উঠলো, এটি প্যারা জাম্পেরই সিগন্যাল। উঠে দরজার পাশে এসে দাঁড়ায় ফারাবী, নিচের দিকে তাকায় ও। সাধারণ কোনো মানুষ হলে এই নিচু দৃশ্য দেখে নিঃসন্দেহেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। ফারাবীর সাথে বাকি সৈন্যরাও প্যারা জাম্পের জন্য এক সারিতে দাঁড়ায়। তবে বিপদ কখনো বলে আসে না। বিমানের পাইলট মাহমুদ হাসানের পাশেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাকে বসে ছিল একজন বার্মিজ আর্মি! বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফোর্মে বলে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। সবাই যখন প্যারা জাম্পের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তখন সে তার ইউনিফোর্মের ভেতর লুকিয়ে রাখা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটি বের করে গুলি চালিয়ে দেয় মাহমুদের উপর! সিটের একপাশের কাত হয়ে পড়ে থাকে মাহমুদের নিথর দেহ। শীতকাল না হলেও, এত উপরে বিমানে সারিতে দাঁড়ানো অনেকেই ঠান্ডায় কাঁপছে। হঠাৎ পেছন থেকে প্রচন্ড গুলির শব্দ! মুহূর্তেই চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে অনেকে। উত্তেজিত হয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই BD-08 হাতে সেই বার্মিজকে দেখতে পায় ফারাবী। রাইফেল হাতে দেখেই বুঝতে বাকি রইলো না, সে শত্রুপক্ষের লোক। দ্রুত পা ফেলে দৌড়ে গিয়ে তার রাইফেল চেপে ধরে ফারাবী। তার হাতের জোরে ফারাবী সামান্য পিছিয়ে পড়ে। দুজনের তীব্র হাতাহাতির কারণে গুলি চলে গিয়ে বিমানের প্রচন্ড ইঞ্জিনে আঘাত হানে! দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে বিমানের ডান পাখায়। হঠাৎ ফারাবী বার্মিজ সৈন্যটির হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে রাইফেল দিয়ে সজোরে তার মাথায় আঘাত করে! উপুড় হয়ে সিটের উপর পড়ে যায় ও। এই সুযোগে রাইফেল তাক করে এক দফা গুলি চালিয়ে দেয় ফারাবী। বার্মিজ সৈন্যটির রক্তাক্ত দেহটি পড়ে রইলো সিটের উপর। ফারাবী পেছন ফিরে উত্তেজিত কন্ঠে বাকিদের বলল, তোমরা সবাই বেরিয়ে পড়ো! তার নির্দেশ মতো বিমান থেকে একের পর এক লাফিয়ে পড়ে কমান্ডোরা। বিমানের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা লাশগুলোর কাছে ছুটে গেল ফারাবী। হাটু গেড়ে বসে একএক করে সবার পাল্স দেখতে লাগলো। তবে সময় হলো না। বিকট শব্দে বিমানের পাখা পুরোপুরি ব্লাস্ট হয়ে পড়ে! হাত দিয়েআগুন থেকে নিজের মুখ আড়াল করে ফারাবী। উপায় না পেয়ে দৌড়ে বিমানের দরজার পাশে যায়। জাম্প করার আগ মুহূর্তে শেষবারের মতো মেঝেতে পড়ে থাকা লাশগুলোর দিকে এক পোলক তাকিয়ে বিমান থেকে খোলা আকাশের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও।
নিচ থেকে ফারাবীকে প্যারা জাম্প করতে দেখে প্রায় পাগলের মতো ছুটে যায় লেফটেন্যান্ট অমিত। শক্ত বুটের শব্দে যেন কেঁপে উঠছে সব। প্যারাশুট নিয়ে নিচে নামতেই বাতাসের তীব্র বেগে মাটিতে আছড়ে পড়ে ফারাবী। ফারাবীর সামনে এসে স্যালুট দিয়ে "সালাম স্যার" বলল লেফটেন্যান্ট অমিত। অমিতের এই চিন্তিত কালো মুখ দেখে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ফারাবী জিঞ্জেস করলো,
- কি হয়েছে anything wrong?
- স্যার ঘন্টা খানেক আগেই খবর আসলো বার্মিজ বাহিনী আমাদের উপর হামলা করতে আসছে! আমার মনে হয় স্যার, তারা কোনো বড়সড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
- বিমানেও আমাদের উপর হামলা হয়েছে। কিভাবে যেন শত্রুপক্ষের একজন আমাদের দলে ঢুকে পড়ে সাতজনকে হত্যা করে।আমাদেরই ইউনিফোর্মে আমাদেরই বিমানে ছিল অথচ, আমরা কেউই তাকে চিনতে পারিনি। ফারাবী বলল
- স্যার, এখন শুধু অপেক্ষা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবাই প্রস্তুত। এখন শুধু লক্ষ রাখতে হবে বার্মিজদের দিকে।
হঠাত কিছুটা দূরে গাড়ির হ্যাডলাইটের মতো একটি লাইট জ্বলে উঠে, সতর্ক হয়ে রাইফেল তাক করে আশেপাশে দৃষ্টি ফেলে ফারাবী! হঠাৎ বিকট শব্দের সাথে একটি বুলেট এসে লাগে লেফটেন্যান্ট অমিতের বুকে, ধপাশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও! চারপাশে শুরু হয় তীব্র গোলাগুলি! মেশিন-গানের অসহ্য শব্দে যেন কান ফেটে আসছে। ফারাবী হাঁটু গেড়ে বসে টেনে তোলার চেষ্টা করে লেফটেন্যান্ট অমিতকে।
- স্যার আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না, বার্মিজরা সবদিক ঘিরে আছে!
কথাগুলো বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লো অমিত। ফারাবী ওঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, "সবাই নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ফায়ার করো!" তীব্র গুলিবর্ষণে যেন কেঁপে উঠছে পরিবেশ। কিছুক্ষণ পরপর গুলিবিদ্ধ আহত সৈন্যদের চিৎকারে পরিবেশটা যেন আরো ভারি হয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মাঝেই প্রচন্ড গোলাগুলিতে পড়ে ভেঙে যায় বড় লাইটগুলো! তবে চাঁদের আলোয় বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে চারপাশ। দূর হলেও, স্পষ্ট শত্রুদের বাংকার দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের প্রায় ঘিরে ফেললেও, পলাশ ও অন্যান্য স্নাইপার-ম্যানরা একে একে উড়িয়ে দিতে থাকে বার্মিজদের। বার্মিজদের আচমকা আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরা প্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন সময় হঠাৎই, বার্মিজ বাহিনীর বাংকারে একসঙ্গে চার পাঁচটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়!
(দয়াকরে কেও কপি করবেন না)😰
পরবর্তী পর্ব......!!!!!
No comments:
Post a Comment